শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, এমন পরিস্থিতিতে দলের প্রতি হুমকির ধারণা তৈরি হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর, আওয়ামী লীগের মিত্র দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কাকরাইল কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার ব্যাপারে সহিংসতার পর, জাতীয় পার্টি শনিবার সেখানে সমাবেশের ডাক দিলেও ছাত্রদের প্রতিরোধের পর সভা স্থগিত করতে হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন জাতীয় পার্টিকে হুমকি মনে করা হচ্ছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে রাজনীতি করার পর এখন জাতীয় পার্টি আবারও তাদের ভূমিকা বাড়াতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই এই হুমকি ধারণা তৈরি হয়েছে। বিশেষত, ভারতের পরামর্শে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে জাতীয় পার্টির। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যেখানে আওয়ামী লীগ এবং ভারত জাতীয় পার্টিকে আবার ব্যবহার করতে চাইতে পারে, এমনটা মনে করছেন কিছু বিশ্লেষক।
জাতীয় পার্টি অবশ্য নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং বলছে যে, অতীতে আওয়ামী লীগ তাদের ব্যবহার করেছে, তবে এখন যে অভিযোগ উঠছে তা অযৌক্তিক। তাদের মহাসচিব মুজিবুল হক বলেছেন, “কেউ যদি বলে আমরা আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে সেটা সঠিক নয়।”
যতই হোক, জাতীয় পার্টি যদি আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেয়, তাহলে এটি আওয়ামী লীগের ভোটারদের কাছে বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে কিছু রাজনৈতিক দল হয়তো জাতীয় পার্টিকে হুমকি হিসেবে দেখছে।
এদিকে, দলের নেতারা দাবি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও হুমকি দেওয়ার মূল কারণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে থাকা কিছু গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া। জাতীয় পার্টি তাদের পলিটিক্যাল অবস্থান ও একাত্মতার বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছে এবং বলছে যে, তারা নিজের ইচ্ছায় আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়নি, বরং পরিস্থিতির কারণে সেটা করতে হয়েছিল।
জাতীয় পার্টি তাদের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলে ২ নভেম্বর ঢাকায় একটি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। এই ঘোষণার পর, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বইন ইয়ামিন মোল্লা কয়েকজনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করেন। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা’ ব্যানারে মশাল মিছিলটি যখন জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে জাতীয় পার্টির বনানী অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন করে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “যেভাবে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে, হামলাকারীদের চেহারা দেখে মনে হয়েছে তারা ছাত্র নয়। এটি রহস্যজনক এবং এর পেছনে অন্য রাজনৈতিক দলের ইন্ধন থাকতে পারে।” তিনি বলেন, এই ধরনের অগণতান্ত্রিক আচরণ রাজনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক প্রশ্ন তোলেন, “হামলা কেন চালানো হলো?” এবং বলেন, “আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবো, জনগণ যদি আমাদের প্রত্যাখ্যান করে, তবে সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে।” এদিকে, হামলার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এই হামলা ছাত্ররা করেনি এবং এর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।