বাবা ভ্যান চালক এবং মা সেলাই মেশিন চালিয়ে পরিবার চালান। এনজিওর ঋণ ও মায়ের কিছু গহনা বন্ধক রেখে আরিফার পড়াশোনার খরচ মেটানো হয়। তবে, সবকিছু ছাপিয়ে তাদের মেয়ে অদম্য মেধাবী আরিফা আক্তার বরিশাল সরকারী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ খবর শুনে পরিবারে আনন্দের জোয়ার।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ভ্যানচালক শেখ আসাদুজ্জামান এবং গৃহিণী হামিমা আক্তারের বড় মেয়ে অদম্য মেধাবী আরিফা আক্তার। তবে, আনন্দের মাঝে অর্থের অভাবে মেডিকেলে ভর্তির বিষয়ে চিন্তায় আছে পরিবার। যদি কেউ আরিফার ভর্তির খরচের জন্য সাহায্য না করে, তবে তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অর্ধেক হয়ে যেতে পারে।
আরিফা আক্তারের পরিবার জানায়, বাবা-মায়ের চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠেছে আরিফা। তার অদম্য মেধার কারণে পারিবারিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সে পড়াশোনায় সফল হয়েছে। ট্যালেন্টপুলে প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেছে। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় আগ্রহী আর তার বাবা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে তাকে পাশে রেখেছেন। সে আজ সরকারী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
আরিফা পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় তার হতদরিদ্র বাবা প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে তাকে কচুয়া থেকে বাগেরহাট সরকারী গার্লস স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং ছুটি শেষে আবারো ভ্যানে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হত তাকে। অর্থকষ্টের কারণে দুই বছর পর বাবা বাগেরহাটে একটি ছোট বাসা ভাড়া নেন। তার ছোট বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
অর্থনৈতিক কষ্ট সত্ত্বেও মা-বাবা তাদের দুই বোনের পড়াশোনার জন্য কখনো বাধা দেননি। ২০২২ সালে বাগেরহাট সরকারী গার্লস স্কুলে এসএসসিতে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পাওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজে ভর্তি হয় আরিফা। ২০২৪ সালে এইচএসসিতে এ-প্লাস (গোল্ডেন) পেয়ে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বরিশাল সরকারী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়।
ভ্যানচালক বাবা ও সেলাই মেশিনের কাজ করা মা মেয়েকে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যাংক, এনজিও এবং স্বর্ণ বন্ধক রেখে প্রায় দুই লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছেন। তবে ঋণের চাপ এবং ভর্তির খরচ মেটানো হতদরিদ্র মা-বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার আনন্দের চেয়ে আরিফা এখন অর্থের অভাবে ভর্তির বিষয় নিয়ে চিন্তিত।
অত্যন্ত দরিদ্র ভ্যান চালক শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজের নাম লিখতেও পারি না। যখন আমার মেয়ে তার মায়ের গর্ভে ছিল, তখনও হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে সাক্ষর করতে পারিনি। সে সময় থেকেই আমি স্বপ্ন দেখেছি, যত কষ্টই হোক না কেন, আমি আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাবো। আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন। আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।’
আরিফার মা হামিমা আক্তার হিমা জানান, ‘মেয়ে পড়াশোনায় অত্যন্ত আগ্রহী ছিল, যার কারণে আমাদের অর্থকষ্ট সত্ত্বেও তার পড়াশোনা কখনো থেমে যায়নি। স্বামীর আয়ে এবং নিজে সেলাই মেশিনের কাজ করে অনেক সময় না খেয়েও তাকে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি। ছোটবেলা থেকেই আরিফা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করে আসছে। এখন ভর্তি হতে পেরেছে, তবে আনন্দের সাথে সাথে ভর্তি এবং পড়াশোনার খরচ নিয়ে চিন্তিত। দুই লক্ষ টাকার ঋণের চাপ এবং ভর্তি ফি যোগাড় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমরা সমাজের বিত্তবানদের এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের সহানুভূতির আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আরিফার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হয়।’