মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এতে নারীসহ সাতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “অদ্য বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা মোটরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকজন বিপথগামী ব্যক্তি এসে অপ্রীতিকর স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা জোরপূর্বক কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়, যা অফিসের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদিন এবং আসাদ বিন রনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের দাবি শুনতে চান। কিন্তু সহযোগিতার পরিবর্তে তারা নির্বাহী সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে নির্বাহী সদস্য নাঈম আবেদিন আহত হন। পরে অন্যান্য নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ব্যক্তিরা কার্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “সহিংসতার পরিবর্তে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির প্রসার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নীতি। সংগঠনটি বিশ্বাস করে, যেকোনো সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সম্ভব। যারা আলোচনার পথ এড়িয়ে সহিংসতাকে বেছে নেবে, তাদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো সহানুভূতি দেখাবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। তাই সংগঠনের প্রতি দেশব্যাপী মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমরা ছাত্র-জনতার প্রতি দায়বদ্ধ এবং তাদের অনুভূতির বিষয়ে সর্বদা সজাগ। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ কাঠামোতে সহিংসতার পরিবর্তে সংহতি ও সম্প্রীতি প্রাধান্য পাবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, “আজকের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিলেও কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক সদস্য নয়। ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল নেতারা এবং ঘটনার সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এর আগে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমি মাত্র খবর পেয়ে এখানে এসেছি। ঘটনার বিস্তারিত জানার পরই সঠিক তথ্য দিতে পারব।”
এদিকে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংঘটিত মারামারির ঘটনায় আহত সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহতরা হলেন— ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমরান সরকার (২১), তেজগাঁও কলেজের জান্নাতুল মিম (২২), আবরার (২২), আলামিন (২৫), আফসার উদ্দিন (২৫), কবি নজরুল কলেজের ছাত্র আসিফ (২৪) এবং ডেমরার বড় মাদ্রাসার ছাত্র মাসুদ (২৪)।
আহত আলামিন ঢামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, “কয়েক দিন আগে যাত্রাবাড়ী জোনের সমন্বয়কদের একটি মতবিনিময় সভা চলছিল। ওই সময় সমন্বয়কদের উপস্থিতিতে আমাদের একজন সহযোদ্ধার ওপর হামলা করা হয়। আজ সেই ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলে আমাদের ওপর পুনরায় হামলা চালানো হয়। এতে আমাদের কয়েকজন সহযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছেন।”