বাণিজ্যমেলায় যেতে বিআরটিসির শাটল বাস ধরার জন্য কুড়িল বিশ্বরোড কাউন্টারে পৌঁছে দেখা গেল অভাবনীয় দৃশ্য! বাস ঘিরে শত শত ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়; সবাই ব্যস্ত কার আগে কে উঠবে সেই প্রতিযোগিতায়।
টিকেট কেটে বাসের ভিড় সামলে যখন পূর্বাচলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় পৌঁছানো হলো, সেখানেও একই চিত্র। শুক্রবারের ছুটির দিনে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মেলা মুখর হয়ে উঠেছিল।
সরকার পরিবর্তন হলেও পূর্বের নিয়মে এবারও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর শুরু হয়েছে জানুয়ারির প্রথম দিনে, যা চলবে মাসব্যাপী এবং ৩১ জানুয়ারি পর্দা নামবে।
শেষ সময়ে এসে মেলায় জমজমাট উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পুরো মেলা প্রাঙ্গণ নানা বয়সী মানুষের কোলাহলে মুখরিত। কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ গৃহস্থালির পণ্য কিনছেন। কারো আগ্রহ আইসক্রিমের দোকানে, আবার কেউ ইলেকট্রনিক পণ্যের স্টলে ভিড় জমাচ্ছেন।
ওয়ালটনের ডিসপ্লে ফ্রিজ মেলায় সাড়া ফেলেছে। ৩২ ইঞ্চি অ্যান্ড্রয়েড ডিসপ্লে যুক্ত ডাবল ডোর ফ্রিজটি ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
রাজধানীর বাড্ডা থেকে আসা রাশেদ হাসান বলেন, “এ ধরনের ফ্রিজ প্রথমবার দেখলাম। এর দরজাটি মিররের মতো কাজ করে, আবার ইউটিউবে গান চালানো বা গুগল ব্যবহার করে ব্রাউজ করার সুবিধাও রয়েছে।”
ওয়ালটনের কাস্টমার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্বপন আলী জানান, “এই স্মার্ট ফ্রিজে অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ভার্সন যুক্ত একটি ডিসপ্লে রয়েছে। এতে সাত-আটটি মোড দেওয়া হয়েছে এবং ফোনের মাধ্যমে ফ্রিজটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
“ফোনের প্রায় সব ফিচারই এখানে ব্যবহার করা যাবে, শুধু কল করা ছাড়া। পাশাপাশি ডোর অ্যালার্ম, বিল্ট-ইন ইনভার্টারসহ আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।”
গৃহস্থালির পণ্যের দোকানগুলোতে ভিড়
বাণিজ্য মেলায় হরেক রকম পণ্যের মধ্যে গৃহস্থালির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। মেলা উপলক্ষে এসব দোকানে দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের ‘অফার’, যা ক্রেতাদের আকর্ষণ করেছে।
মেলায় ‘আল্লাহর দান ক্রোকারিজ কর্নার’-এ ১৩০ টাকায় যেকোনো গৃহস্থালি পণ্য পাওয়া যাচ্ছিল। সেখান থেকে টিফিন বক্স কিনছিলেন মোহাম্মদপুরের গৃহিনী সাদিয়া সুলতানা।
তিনি বলেন, “মেলায় কিছু পণ্য অফারে পাওয়া যায়, যেমন এখানে ১৩০ টাকায় নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এজন্যই এসেছি। সাধারণত বাজার থেকে কেনা যায়, কিন্তু মেলায় একই ধরনের অনেক দোকান থাকায় ঘুরে ঘুরে পছন্দমতো কিনতে সুবিধা হয়।”
জামা-জুতা এবং খাবারের দোকানেও ছিল প্রচুর ভিড়
বাণিজ্য মেলায় জামা-জুতা এবং খাবারের দোকানগুলো ক্রেতাদের বেশ আকৃষ্ট করেছিল। ‘আয়াত’ নামক দোকান থেকে আচার কিনে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছিলেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আসা ফারিয়া রেশমি। তিনি বলেন, “রসুনের আচারটি আমার প্রিয়, তাই নিয়েছি। জামা নিজের জন্য এবং বাচ্চার জন্য জুতা কিনেছি। সব মিলিয়ে ভালো সময় কাটল, এখানে একটা উৎসবের পরিবেশ রয়েছে।”
পাশে জুতা দেখছিলেন ধানমণ্ডি-২৭ থেকে আসা মীর হেলাল। তিনি বলেন, “বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছি ছুটির দিনে। আসলে আমাদের আনন্দের সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে এই মেলায় এসে একটু আনন্দ পেলাম।”‘ফেবার কাসল’ নামে আঁকাআঁকি পণ্যের স্টল থেকে নিজের ছেলেকে আঁকার পেন্সিল কিনছিলেন মগবাজারের জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাচ্চাটা আঁকাআঁকি করতে পছন্দ করে, তাই এই পেন্সিলগুলো কিনে দিলাম। রঙ পেন্সিল ও লেখার পেন্সিলও কিনলাম।”
এবারের মেলায় আরও বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে
সোর্সিং কর্নারে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে অংশ নিয়েছে ছয়টি চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান— মেঘনা, কাজী অ্যান্ড কাজী, ইস্পাহানি, আবুল খায়ের, ফিনলে, এবং সিটি।
এছাড়া, দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুটি সংগঠন— বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ— এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফএফএমইএবি) তিনটি প্যাভিলিয়ন করেছে। এসব প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হচ্ছে তৈরি পোশাক, চামড়ার জুতা, ব্যাগ, বেল্টসহ নানা পণ্য।
কারা অধিদপ্তরও তাদের পণ্য নিয়ে স্টল বসিয়েছে, যেখানে কারাগারের বন্দিদের তৈরি মোড়া, টুল, দোলনা, চেয়ার, লুঙ্গি, জামদানি, নকশিকাঁথা, শোপিসসহ নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
গেলবারের মতো মেলায় আসা-যাওয়ার জন্য বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিসও চালু রয়েছে, এবং উবারের পিক আপ জোনও করা হয়েছে।
এছাড়া, এবার প্রথমবারের মতো মেলায় অনলাইন টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা দিয়ে ফোনে স্ক্যান করে টিকেট কেটে মেলায় প্রবেশ করা যাচ্ছে— কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই।