ম্যাচের আগেই সাধারণত খেলোয়াড়েরা তাদের জার্সি পরেই প্রস্তুত হন, তবে স্টামফোর্ড ব্রিজে গতকাল রাতে এক ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেল। স্যুট পরে মাঠে ঘোরাঘুরি করছিলেন এফসি নোয়ার খেলোয়াড়রা, ভিডিও তুলছিলেন, ছবি দিচ্ছিলেন। এই মাঠে তারা আর কখনো আসবেন কিনা, তা কেউ জানে না! অথচ কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের খেলতে হবে চেলসির বিরুদ্ধে। নোয়ার খেলোয়াড়দের জন্য এ যেন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, শুধু এই ম্যাচই নয়, চেলসির মাঠে খেলার সুযোগ পাওয়া তাদের জন্য বড় একটি ঘটনা।
কিন্তু এরপরই বাস্তবতা সামনে আসে। উয়েফা কনফারেন্স লিগের এই ম্যাচে চেলসির কাছে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত হয় আর্মেনিয়ার ক্লাবটি। চেলসির জন্য কনফারেন্স লিগে এটি ছিল সবচেয়ে বড় জয়। প্রথমার্ধেই তারা ৬-০ গোলে এগিয়ে ছিল, আর কনফারেন্স লিগে তাদের এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচেই দ্বিতীয় সারির দল খেলিয়ে জয়লাভ করার পাশাপাশি ১৬ গোলও করেছে।
চেলসির ইতিহাসে এটি ছিল যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বড় জয়। ১৯৭১ সালে কাপ উইনার্স কাপে লুক্সেমবার্গের ক্লাব জিউনেস হাউকারেজকে ১৩-০ গোলে হারানোর পর এবারই ছিল তাদের দ্বিতীয় বড় জয়।
উয়েফার ইউরোপিয়ান ক্লাব র্যাঙ্কিংয়ে চেলসি অষ্টম, আর নোয়া ৩১১তম স্থানে। এই পার্থক্যই ম্যাচের ফলাফলে প্রতিফলিত হয়। চেলসির হয়ে ৬ জন গোল করেছেন, এর মধ্যে জোয়াও ফেলিক্স ও ক্রিস্তোফার এনকুনু দুটো করে গোল করেছেন। এনকুনু বল পোস্টে মারলে হ্যাটট্রিকও পেতে পারতেন।
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এফসি নোয়া আর্মেনিয়ার প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব। কনফারেন্স লিগে প্রথম কোয়ালিফাইংয়ে অংশ নিয়ে প্লে-অফে পৌঁছাতে সফল হয়েছে তারা। ২০১৯ সালে ক্লাবটির নাম ও মালিকানা পরিবর্তিত হয়ে নোয়া রাখা হয়, যা বাইবেলের চরিত্র নোয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। নোয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি আর্মেনিয়ার ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।
মাঠে নামার আগে নোয়ার পর্তুগিজ কোচ রুই মোতা বলেছিলেন, “কনফারেন্স লিগ আমাদের জন্য এক ধরনের পাদপ্রদীপের মতো, যা ইউরোপীয় পর্যায়ে আমাদের পরিচিতি এনে দিয়েছে। এই ম্যাচটি ক্লাব, ভক্ত ও আর্মেনিয়ান ফুটবলের জন্য বিশেষ।”
এফসি নোয়ার নামকরণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, বাইবেলের গল্প অনুযায়ী নোয়ার নৌকা মহাপ্লাবনের পর আরারাত পর্বতে থেমেছিল, এবং এই এলাকা আর্মেনিয়ার একটি বড় অংশে রয়েছে। এই নাম আর্মেনিয়ানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।
এফসি নোয়ার সঙ্গে পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগোর সম্পর্কও রয়েছে। ক্লাবের মালিক ভার্দেস ভারদানিয়ান জানান, “লুইস ফিগো আমাদের এই প্রজেক্টের শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছেন এবং ক্লাবের উন্নতির জন্য সাহায্য করতে চেয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ করতে খুবই আগ্রহী, বিশেষ করে তরুণ প্রতিভাদের বিকাশে তার সাহায্য নেব।”