বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ ঐক্যজোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার তাকে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
জামিন না মঞ্জুর হওয়ায় চিন্ময় দাশের ক্ষুব্ধ সমর্থকরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। চিন্ময় দাশের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ জানিয়েছেন, “এই মামলা ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমরা আজ জামিনের আবেদন করি, কিন্তু শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর হয়। “তবে, আমরা কারাগারে তার ডিভিশন ও ধর্মীয় বিধান মেনে চলার জন্য দুটি আবেদন করি, যা আদালত মঞ্জুর করেছে। এই আদেশে আমরা হতাশ, এবং আগামীকাল আবার জামিনের আবেদন জানাব।”
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে আট দফা দাবি তুলে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী। ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে এক জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে চিন্ময় দাশও আসামি হন।
মামলা দায়েরের এক মাস পর, সোমবার বিকালে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে জানানো হয় যে, কোতোয়ালি থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, কক্সবাজারসহ একাধিক জেলায় সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
চিন্ময় দাশকে রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয় এবং মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টায় কঠোর নিরাপত্তায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে আদালতে নেওয়ার সময় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে সমবেত সনাতনীদের উদ্দেশে প্রণাম করে হাত তোলেন চিন্ময় দাশ। তার পক্ষে আদালতে বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
চিন্ময় দাশকে এজলাসে হাজির করা হলে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান উঠাতে থাকেন। এই অবস্থায় চিন্ময় দাশ হাত জোড় করে তাদের স্লোগান দিতে নিষেধ করেন। তাকে এজলাসের সামনের বেঞ্চে বসানো হয়। বিচারক বলেন, “তিনি চট্টগ্রামের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নিয়ম আছে। তার কাস্টডি ওয়ারেন্টও নিতে হবে।”
এ সময় আইনজীবীরা একসাথে তাদের সকলের বিরুদ্ধে কাস্টডি ওয়ারেন্ট জারির দাবি জানিয়ে জামিন শুনানি করার আহ্বান জানান। বিচারক জবাবে বলেন, “আপনারা যেভাবে উনার প্রতি আবেগ প্রদর্শন করছেন, তা আমি শ্রদ্ধা করি। তবে জামিন শুনানি হবে কিনা, তা আগে দেখতে হবে।”
এরপর বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান এবং চিন্ময় দাশ ও তার আইনজীবীরা পুনরায় বিচারক আসার অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিচারক পুনরায় এজলাসে ফিরে এসে জামিন শুনানি করার নির্দেশ দেন।
এ সময় চিন্ময় দাশের পক্ষে আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা জামিন শুনানি করেন, এবং চিন্ময় দাশ নিজেও কিছু কথা বলেন। জামিন আবেদন নাকচ হলে, চিন্ময় দাশের আইনজীবীরা আদালত থেকে তার ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান। আদালত কারাবিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।